গাকৃবিতে গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

3 Min Read

গমের ব্লাস্ট রোগের টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) আজ ১৪ জুলাই দিনব্যাপী হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “ব্যাসিলাস ভিত্তিক বালাইনাশক প্রস্তুতি ও ব্যবহার”। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর উদ্দ্যোগে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও ইউএসডিএ এর অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার প্রধান লক্ষ্য ছিল গমের ব্লাস্টের মতো ধ্বংসাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ মোকাবিলায় রাসায়নিকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বালাইনাশক উৎপাদন ও ফর্মুলেশনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা। অংশগ্রহণকারীরা ব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে জৈব বালাইনাশক তৈরি ও মাঠ পর্যায়ে তার প্রয়োগ সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন গাকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. জহুরুল করিম। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং আইবিজিই এর সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. তোফাজ্জল ইসলাম।

উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আইকিউএসি এর পরিচালক প্রফেসর ড. নাসরীন আক্তার আইভী,প্রফেসর ড. মোঃ মোর্শেদুর রহমান, আইবিজিই এর সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান সহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, আইবিজিই-এর শিক্ষার্থী, বিএআরআই ও ব্রি থেকে আগত আমন্ত্রিত বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন ইনডাস্ট্রির প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আইবিজিই’র পরিচালক প্রফেসর ড. শাহ্ মোহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গমের ব্লাস্ট একটি ভয়াবহ রোগ যা প্রতিবছর ফসলের বিপুল ক্ষতি করে। রাসায়নিকের বিকল্প হিসেবে ব্যাসিলাস-ভিত্তিক জৈব প্রযুক্তি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সমাধান হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।” বিশেষ অতিথি ড. জহুরুল করিম বলেন, “কৃষক পর্যায়ে জৈব বালাইনাশক তৈরির দক্ষতা পৌঁছে দিতে পারলে গম চাষে একটি টেকসই পরিবর্তন আসবে। আমাদের লক্ষ্য কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও উপযোগী সমাধান নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, অণুজীবের শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য অণুজীবভিত্তিক বায়োফার্টিলাইজার ও বায়োপেস্টিসাইড বাণিজ্যিকীকরণ সহজতর করার জন্য দেশে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করা জরুরী।” প্রশিক্ষণের কারিগরি পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. লতিফুল বারী ব্যাসিলাস ভিত্তিক জৈব বালাইনাশক ফর্মুলেশনের প্রযুক্তিগত দিকগুলো উপস্থাপন করেন।

এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. তোফাজ্জল হোসাইন রনি কীটনাশক প্রস্তুতির প্রক্রিয়া ও প্রয়োগ কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা গমের ব্লাস্ট দমনে ব্যাসিলাসের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের কৌশল হাতে- কলমে শিখে সরাসরি মাঠে প্রয়োগযোগ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

এ কর্মশালার অন্যতম আয়োজক ড. তোফাজ্জল ইসলাম জানান, এই প্রশিক্ষণে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গম উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের কো-পিআই ও আইবিজিই এর সহযোগী অধ্যাপক ড. দিপালী রাণী গুপ্তা।

Share This Article
Leave a Comment