গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সাত হাজার পাঁচশত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা দায়ের করেছে। সোমবার (৪ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোঃ আশিকুর রহমান বাদী হয়ে গাজীপুর দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে বেলা ৪টায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে নগর ভবনসহ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিল প্রস্তুত, মাষ্টার রোল কর্মী নিয়োগ, ভুয়া সভা, অনুদান, আপ্যায়ন, ইজারা খাতসহ বহু খাতে প্রকৃত কোনো কাজ না করেই বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এ অর্থ সরকারি উন্নয়ন তহবিল ও কর্পোরেশনের রাজস্ব খাত থেকে কৌশলে তুলে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
এজাহারে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও হিসাব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট ৭৫০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে রাজস্ব তহবিল থেকে ১৩৬ কোটি টাকা, টেন্ডার/RFQ বাবদ ১২৮ কোটি টাকা, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ৯ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২ কোটি টাকা, উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজস্ব তহবিলে স্থানান্তরের নামে ৯৯৯ কোটি টাকা, রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে ৭২ কোটি টাকা, মাস্টাররোল কর্মী ও করোনা খাতে ভুয়া বিলের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা, এমনকি হাট-বাজার ইজারা ও ট্রাফিক নিয়োগ খাতেও অসংখ্য অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রিমিয়ার ব্যাংকের কোনাবাড়ী শাখায় ভুয়া হিসাব খুলে ২.৬ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়, জাতীয় নির্বাচনের আগেও চেকের মাধ্যমে ১৩ কোটি টাকা তোলা হয়, মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন দেখিয়ে আরও কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
মামলাটি দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় রুজু করা হয়েছে। এজাহার দাখিল করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ আশিকুর রহমান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে অপরাধ সংশ্লিষ্ট সব প্রমাণ ও তথ্য যাচাই শেষে এজাহার প্রস্তুত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ২৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলনের তথ্য মিলেছে, যা আদতে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই দুর্নীতিতে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সোহেল হাসান জানান,
“গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন একটি গণমুখী, জবাবদিহিমূলক ও সেবাপ্রধান প্রতিষ্ঠান। অতীতের যেকোনো অভিযোগ বা অনিয়মের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে— যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অংশ হিসেবেই আমরা বিবেচনা করি। বর্তমান প্রশাসন সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায্যতা ও নিয়ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই গাজীপুরের জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব।