গাজীপুর ফিডস কারখানা ম্যানেজার খুন, গ্রেপ্তার ২

4 Min Read

গাজীপুর ফিডস কারখানা ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলাম খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার কুনিয়া মোতালেব মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বগুড়া সদরের জরুন নগর এলাকার খলিল শেখের ছেলে মোঃ নয়ন (২১) এবং একই জেলার সারিয়াকান্দি থানার মানিকদার চর এলাকার মোঃ এরশাদ আলীর ছেলে মোঃ আল আমিন (১৯)। তারা গাছা থানা এলাকায় বসবাস করতো।

২২ জুলাই বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতরা রফিকুলকে নৃশংস হত্যার দায় স্বীকার করে গাজীপুর মহানগরের বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

বুধবার গাজীপুরের পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই তথ্য জানানো হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ আতাউর মার্কেট সাকিনস্থ মাসুদ এর পাঁচতলা ভাড়া বাড়ীর চার তলার (পূর্ব পাশের মাঝের রুমে) মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম (৪৮) প্রায় ৬/৭ বছর যাবত স্বপরিবারে ভাড়া বাসায় থেকে গাজীপুর ফিডস ‘লিমিটেডে সিনিয়র ম্যানেজার হিসাবে চাকুরি করতেন। গত ২৭ মে ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য রফিকুল ইসলামকে বাসায় রেখে ছেলে রাতুল আহাম্মেদ তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানাধীন ফুলবাড়ী গ্রামে যান। অতঃপর গত ২০জুলাই সকাল ৯টার দিকে রাতুল তার বাবাকে মোবাইলে না পেয়ে সকাল ১১টার দিকে তার দুই বন্ধু ও বাবার সহকর্মীদের ফোন করে তাদের বাসায় যেতে বললে তারা ঐ দিন দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাতুলদের বাসায় গিয়ে রুমের বাহির থেকে দরজায় তালাবদ্ধ দেখে ও বাড়ীর মালিকের উপস্থিতিতে বাসার দরজার তালা ভেঙ্গে রুমের ভেতর ঢুকে রফিকুল ইসলামকে রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় খাটের উপর পড়ে থাকতে দেখে এবং রুমের ভেতরে আলমারীর ড্রয়ার খোলা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখতে পায়।

গত ১৯জুলাই রাত প্রায় ১১টা হতে ইং ২০জুলাই দুপুর সাড়ে ১২ টার মধ্যে যেকোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রফিকুল ইসলামকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পরবতীর্তে জিএমপি কোনাবাড়ী থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ব্যাপারে ২০ জুলাই রফিকুলের ছেলে রাতুল আহাম্মেদ বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। কোনাবাড়ী থানা পুলিশ দুই দিন মামলাটি তদন্ত করার পর গাজীপুরের পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করে।

অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই মোঃ মোস্তফা কামালের সঠিকতত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার, মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি উপ—পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ), সনজিৎ বিশ্বাস তদন্ত করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামীদ্বয় রফিকুলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক শেষে তাদের কথামত ৫ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু মোশাররফ ওই টাকা না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও ধারন করে তা ভাইরাল করার ভয় দেখায়। ফলে আসামীদ্বয় ক্ষিপ্ত হয় এবং আসামী মোঃ আল আমিনের সঙ্গে আনা চাকু দিয়ে রফিকুলের গলা ও উরুতে আঘাত করতঃ হত্যা করে। পরে রফিকুলের ঘরে থাকা মাটির ব্যাংকে থাকা ৭৭০ টাকা, মানি ব্যাগে থাকা ১০০০টাকা ও রফিকুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায়। আসামীদ্বয় পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও রফিকুলের মোবাইল ফোন স্কথানীয় ড্ডা ব্রীজের কাছে বাস থেকে ফেলে দেয়।

এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। নিহত রফিকুল ইসলাম গাজীপুর ফিডস ‘লিমিটেড-এর সিনিয়র ম্যানেজার পদে চাকুরী করতেন। ঘটনার দিন মামলার ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত আসামীদ্বয়কে দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য ৫,০০০টাকায় ভাড়া করে ডিসিস্টের বাসায় ডেকে আনে। শারীরিক সম্পর্ক শেষে আসামীদ্বয় রফিকুলের কাছে টাকা চাইলে ডিসিস্ট টাকা না দিয়ে গোপনে মোবাইলের মাধ্যমে ধারন করা ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃতরা ক্ষিপ্ত হয়ে চাকু দিয়ে রফিকুলের গলা ও উরুতে আঘাত করতঃ হত্যা করে রফিকুলের মোবাইল ফোন, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু মাটির ব্যাংক ও মানিব্যাগে থাকা মোট ১৭৭০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। আসামীদ্বয় পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ডিসিস্টের মোবাইল ফোন কড্ডা ব্রীজের কাছে বাস থেকে ফেলে দেয়।

Share This Article
Leave a Comment